জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে ২০২৫ সালে দেখুন
জমি কিনেছেন বা পেয়েছেন, কিন্তু এখন খারিজ করতে হবে? যদি না করেন, জমির আসল মালিকানা পাবেন না!
আমি নিজেও একবার এই ঝামেলায় পড়েছিলাম। কাগজ ঠিক ছিল না, তাই দেরি হয়েছে। আপনার যেন এমন না হয়, তাই সহজ করে সব জানিয়ে দিচ্ছি। চলুন ধাপে ধাপে দেখি!
খারিজ বা নামজারি কি?
খারিজ বা নামজারি মানে হলো জমির সরকারি রেকর্ডে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা।
একটা সহজ উদাহরণ দেই—ধরুন, আপনি একটা জমি কিনলেন। কিন্তু সরকারি রেকর্ডে এখনো পুরোনো মালিকের নাম আছে। আপনি যদি নামজারি না করেন, তাহলে জমির আসল মালিকানা আপনার নামে থাকবে না!
নামজারি করলে কী সুবিধা পাবেন?
✅ জমির মালিক হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাবেন।
✅ জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) দিতে পারবেন।
✅ ভবিষ্যতে জমি বিক্রি বা উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর করতে পারবেন।
✅ কোনো ধরনের মালিকানা বিরোধ হলে, আইনি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
নামজারি আসলে জমির আইনি মালিকানা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া।
ই-নামজারি কি?
ই-নামজারি হলো অনলাইনে জমির খারিজ বা নামজারি করার পদ্ধতি। আগে এই কাজ করতে হলে ভূমি অফিসে যেতে হতো, কিন্তু এখন ঘরে বসেই করা যায়!
ই-নামজারি করার সুবিধা:
✅ দালাল ছাড়া দ্রুত আবেদন করা যায়।
✅ ঘরে বসে স্ট্যাটাস চেক করা যায়।
✅ ভূমি অফিসে না গিয়েও কাজ শেষ করা সম্ভব।
✅ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত।
কোথায় আবেদন করবেন?
land.gov.bd (ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট)
এখন অনেকেই অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি জানতে চান। ই-নামজারি সেই কাজকে সহজ করেছে
আরও পড়ুন: মৌজা ম্যাপ জমির নকশা ডাউনলোড করুন অনলাইনে
জমি খারিজ করা কেন জরুরি?
ধরুন, আপনার নামে জমি আছে, কিন্তু রেকর্ডে এখনো পুরোনো মালিকের নাম। এতে ভবিষ্যতে আপনি জমি বিক্রি করতে পারবেন না, ব্যাংক লোন পেতে সমস্যা হবে, এমনকি দখল-সংক্রান্ত ঝামেলাও হতে পারে। তাই জমির খারিজ আপনার মালিকানা আইনসম্মতভাবে নিশ্চিত করে।
জমি খারিজ না করলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
✅ সরকারি রেকর্ডে পুরোনো মালিকের নাম থেকেই যাবে।
✅ পরবর্তী প্রজন্ম জমির মালিকানা পেতে সমস্যায় পড়বে।
✅ ভবিষ্যতে জমি বিক্রি করতে চাইলে অতিরিক্ত ঝামেলা হবে।
এখন বুঝলেন তো, খারিজ করা কতটা দরকার? এবার দেখি জমি খারিজ করার পদ্ধতি কী।
জমি খারিজ করার পদ্ধতি – ধাপে ধাপে গাইড
আপনার কাছে যদি সঠিক কাগজপত্র থাকে, তাহলে জমি খারিজ করা কঠিন কিছু না। শুধু ঠিকঠাক নিয়ম মেনে আবেদন করলেই হবে।
ধাপ ১: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন
প্রথম ধাপেই সব কাগজ ঠিকঠাক রাখা দরকার। না হলে অফিসে গিয়ে বারবার ঘুরতে হবে! জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে ২০২৫ সালে?
✅ আবেদনপত্র (ভূমি অফিস থেকে পাওয়া যাবে)
✅ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
✅ জমির মূল দলিলের ফটোকপি (রেজিস্ট্রি কপি)
✅ খতিয়ানের কপি
✅ ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ (হালনাগাদ থাকা বাধ্যতামূলক)
✅ ওয়ারিশ সনদ (উত্তরাধিকার সূত্রে পেলে)
✅ বণ্টননামা (যদি জমির মালিক একাধিক হয়)
এগুলো ঠিকঠাক থাকলে অর্ধেক কাজ হয়ে গেল!
ধাপ ২: অফিসে গিয়ে জমা দিন বা অনলাইনে আবেদন করুন
২০২৫ সালে এখন অনেক কিছুই অনলাইনে হয়, তাই জমি খারিজও অনলাইনে করা যায়। যদি সরাসরি অফিসে যান, তাহলে স্থানীয় উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করতে হবে।
অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি:
১️⃣ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (land.gov.bd) যান।
2️⃣ মিউটেশন অপশনে ক্লিক করুন।
3️⃣ আবেদন ফর্ম পূরণ করুন এবং কাগজপত্র আপলোড করুন।
4️⃣ নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন।
5️⃣ আবেদনের ট্র্যাকিং নম্বর সংগ্রহ করুন।
অনলাইনে করলে অফিসে বারবার যেতে হবে না, আর পুরো প্রসেস সহজ হবে!
জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে?
এটা নির্ভর করে আপনার জমির পরিমাণ ও লোকেশন অনুযায়ী। তবে ২০২৫ সালে সাধারণত খারিজ ফি হয় ২০০-১০০০ টাকা।
অতিরিক্ত খরচ কোথায় লাগতে পারে?
✅ দলিলের নকল কপি নিতে ২০০-৫০০ টাকা
✅ যদি উকিলের সাহায্য নেন, তাহলে ৩,০০০-৫,০০০ টাকা
✅ দালালের মাধ্যমে করলে খরচ আরও বাড়তে পারে!
আমার পরামর্শ? সরকারি অফিস থেকে নিজেই করুন, খরচ বাঁচবে!
আরও পড়ুন: জমির খাজনা কত টাকা শতক – জানুন সব খুঁটিনাটি
জমি খারিজ করতে কতদিন সময় লাগে?
সাধারণত: ১৫-৩০ দিন লাগে।
অনলাইনে আবেদন করলে: ১০-২০ দিনে হয়ে যেতে পারে।
যদি কাগজপত্র ঠিক না থাকে: ২-৩ মাসও লাগতে পারে!
তাই প্রথমেই সব কাগজ গুছিয়ে নিন, তাহলে দ্রুত হয়ে যাবে!
কিছু দরকারি পরামর্শ (নিজের অভিজ্ঞতা থেকে)
🔹 ভূমি অফিসে যাওয়ার আগে কাগজপত্র ডাবল চেক করুন।
🔹 ফি পরিশোধের রশিদ সংরক্ষণ করুন, প্রমাণ রাখতে হবে।
🔹 কোনো তথ্য ভুল না দিয়ে সততার সঙ্গে আবেদন করুন।
🔹 দালালের ফাঁদে পড়বেন না, নিজেই প্রসেস করুন।
আমার এক আত্মীয় জমি খারিজ করতে গিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছিল। পরে যখন সংশোধন করতে চাইল, তখন বাড়তি সময় আর টাকা খরচ করতে হয়। তাই প্রথমেই সঠিক তথ্য দিন—জমা দেওয়ার পর পরিবর্তন করা কঠিন!
শেষ কথা – সহজ করে বললে!
জমি খারিজ মানে জমির আসল মালিক আপনি, সেটা সরকারি রেকর্ডে যুক্ত করা। ২০২৫ সালে নিয়ম সহজ হয়েছে, তাই ঘাবড়ানোর কিছু নেই!
📌 প্রথমে কাগজ ঠিক করুন।
📌 তারপর অনলাইনে বা অফিসে আবেদন করুন।
📌 নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন।
📌 ১৫-৩০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ!
এটাই হল জমি খারিজ করার পদ্ধতি