ই পর্চা বের করার নিয়ম জানুন সহজ উপায়ে
জমির পর্চা বা খতিয়ান বের করার দরকার? ভাবছেন, অনলাইনে কিভাবে এটি করবেন? চিন্তার কিছু নেই! আগে হয়তো এটা একটা ঝামেলার কাজ ছিল—নানান অফিসে ঘুরতে হতো, অনেক সময় লাগতো। কিন্তু এখন, প্রযুক্তির বদৌলতে, আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে জমির পর্চা বের করতে পারেন, মাত্র কয়েক মিনিটে!
আজ আমি আপনাকে ই পর্চা বের করার নিয়ম নিয়ে এমনভাবে বলবো, যেন আপনি সহজেই বুঝতে পারেন। গল্পের মতো মনে হবে, কিন্তু তথ্য সব বাস্তব ও কাজে লাগার মতো! চলুন শুরু করা যাক।
ই পর্চা আসলে কী এবং কেন দরকার?
একটা সময় জমির কাগজ বলতে ছিল হাতের লেখা দলিল আর মোটা মোটা রেজিস্ট্রার বই। এখন সব ডিজিটাল! ই-পর্চা মানে হলো জমির ডিজিটাল পর্চা বা খতিয়ান, যা অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে।
কেন দরকার?
- জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে
- বিক্রি বা দলিল তৈরি করতে
- জমি নিয়ে বিরোধ এড়াতে
- ব্যাংক থেকে লোন নিতে
এক কথায়, জমির নথি ঠিক থাকলে কোনো ঝামেলা হবে না!
কিভাবে অনলাইনে জমির পর্চা বের করবেন? (Step-by-Step গাইড)
আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থাকলেই হবে। কিছু তথ্য জানলেই অনলাইনে জমির পর্চা বের করা সম্ভব।
✅ ধাপ ১: সরকারী ওয়েবসাইটে যান
👉 প্রথমে https://dlrms.land.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যান।
👉 “খতিয়ান অনুসন্ধান” বা Survey Record Search অপশনে ক্লিক করুন।
✅ ধাপ ২: জমির ঠিকানা নির্বাচন করুন
এখন আপনাকে ঠিকানা দিতে হবে। ঠিক কোথায় আপনার জমি আছে, তা সিলেক্ট করুন:
📍 বিভাগ → জেলা → উপজেলা → মৌজা
📝 মনে রাখবেন:
ভুল ঠিকানা দিলে আপনার জমির পর্চা পাবেন না! তাই সাবধানে তথ্য দিন।
✅ ধাপ ৩: ই পর্চা খতিয়ান অনুসন্ধান করুন
এখানে দুটি অপশন পাবেন—
অনুসন্ধান পদ্ধতি | কী দিতে হবে? |
খতিয়ান নম্বর দিয়ে | আপনার জমির খতিয়ান নম্বর |
মালিকের নাম ও দাগ নম্বর দিয়ে | মালিকের নাম + জমির দাগ নম্বর |
যদি আপনার খতিয়ান নম্বর জানা না থাকে, তাহলে মালিকের নাম ও দাগ নম্বর দিয়ে খুঁজুন।
আরও পড়ুন : www.land.gov bd আর এস খতিয়ান চেক করুন খুব সহজ নিয়মেই
✅ ধাপ ৪: জমির পর্চা যাচাই করুন
আপনার দেওয়া তথ্য সঠিক হলে, পর্চার বিস্তারিত তথ্য স্ক্রিনে চলে আসবে।
এখানে কী কী থাকবে?
✔️ জমির মালিকের নাম
✔️ জমির দাগ নম্বর
✔️ জমির পরিমাণ
✔️ জমির খতিয়ান নম্বর
সব তথ্য মিলিয়ে দেখুন, ঠিক আছে কিনা!
জমির খতিয়ান ডাউনলোড করার নিয়ম
অনলাইনে শুধু দেখলেই হবে না, প্রয়োজন হলে খতিয়ানের কপি ডাউনলোড করতে হবে।
📌 ডাউনলোড করতে যা লাগবে:
1️⃣ জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর
2️⃣ সঠিক জন্মতারিখ
3️⃣ মোবাইল নম্বর
4️⃣ ইমেইল (ঐচ্ছিক)
ডাউনলোড অপশনে গেলে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। ফি পরিশোধ করা যাবে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় দিয়ে।
✉️ সার্টিফাইড কপি চাইলে?
সার্টিফাইড কপি ডাকযোগে নিতে চাইলে ৪০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। সব মিলিয়ে ১৪০ টাকায় ৭ দিনের মধ্যে হাতে পেয়ে যাবেন!
অনলাইনে জমির পর্চা বের করার সময় সাধারণ সমস্যাগুলো
অনেক সময় ওয়েবসাইটে সমস্যা দেখা দেয়, বা আপনার পর্চা পাওয়া যায় না। কেন হয়?
🛑 সমস্যা: ওয়েবসাইট লোড হয় না।
✅ সমাধান: অন্য ব্রাউজার দিয়ে চেষ্টা করুন বা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
🛑 সমস্যা: ভুল তথ্য দেখায়।
✅ সমাধান: নিকটস্থ ভূমি অফিসে গিয়ে তথ্য ঠিক আছে কিনা যাচাই করুন।
🛑 সমস্যা: পর্চা অনলাইনে নেই!
✅ সমাধান: ভূমি অফিসে আবেদন করুন, যেন আপনার পর্চা অনলাইনে আপলোড করা হয়।
আরও পড়ুন : বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম: সহজভাবে জানুন কিভাবে কাজ করে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস!
✔️ পর্চা দেখার পর স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন।
✔️ জমির তথ্য কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না, প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
✔️ ওয়েবসাইটে সমস্যা হলে রাতের দিকে চেষ্টা করুন, তখন লোড কম থাকে।
শেষ কথা
আজকাল জমির তথ্য পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ। ই পর্চা বের করার নিয়ম জানলে, অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। নিজেই মোবাইল দিয়ে দেখে নিতে পারবেন!
আমি নিজেও একবার ভুল ঠিকানা দিয়ে পর্চা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে ঠিক করে দেওয়ার পর কয়েক মিনিটেই খুঁজে পেলাম! আপনিও সাবধানে তথ্য দিন, তাহলেই দ্রুত পর্চা পেয়ে যাবেন।